বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়দের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা এনওসি (NOC) নিয়ে যে সমস্যাগুলো প্রায়শই দেখা যায়, তা নিয়ে আপনিও হয়তো অনেকবার শুনেছেন। খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক লিগ বা অন্য কোনো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য এই এনওসিটা খুবই জরুরি। কিন্তু খেলোয়াড়দের NOC জটিলতা আর এনওসি পেতে গিয়ে তাদের যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা যেন শেষ হওয়ার নয়। কেন এমনটা হচ্ছে, আর এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, চলুন আজ সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
Table of Contents

খেলোয়াড়দের NOC জটিলতা: খেলোয়াড়দের স্বপ্নপূরণের পথে বাধা?
আপনি কি জানেন, একজন খেলোয়াড় যখন দেশের বাইরে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার সুযোগ পান, তখন সেটা তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, এটা তার দক্ষতা বাড়ানোর এবং বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের সাথে মেলামেশারও একটা দারুণ সুযোগ। কিন্তু এই সুযোগগুলো অনেক সময়ই হাতছাড়া হয়ে যায় শুধু সময়মতো এনওসি না পাওয়ার কারণে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং অন্যান্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়শই এই অভিযোগ ওঠে। খেলোয়াড়দের অভিযোগ, তারা সময়মতো আবেদন করলেও অনেক সময় এনওসি পেতে দেরি হয়, অথবা কোনো কারণ ছাড়াই তা আটকে দেওয়া হয়।
কেন এই এনওসি এত গুরুত্বপূর্ণ?
এনওসি হলো এক ধরনের অনুমতিপত্র, যা সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া বোর্ড বা ফেডারেশন থেকে খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে যে, খেলোয়াড় দেশের বাইরে খেললে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এই অনুমতি ছাড়া কোনো খেলোয়াড় অন্য কোনো দেশের লিগে বা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন না। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, খেলোয়াড়দের উপর বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। তবে অনেক সময় এই নিয়ন্ত্রণই খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিসিবি এবং অন্যান্য ফেডারেশনগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি
ক্রীড়া বোর্ডগুলো সাধারণত দুটি প্রধান কারণে এনওসি দিতে অনীহা প্রকাশ করে:
- জাতীয় দলের ব্যস্ততা: যদি কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ বা গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট চলমান থাকে বা আসন্ন হয়, তখন বোর্ড খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের জন্য ধরে রাখতে চায়।
- খেলোয়াড়ের ফিটনেস: অনেক সময় ইনজুরির কারণে খেলোয়াড়দের এনওসি আটকে দেওয়া হয়, যাতে তারা পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে মাঠে না নামে।
তবে খেলোয়াড়দের অভিযোগ, অনেক সময় এই কারণগুলো স্বচ্ছ থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে জাতীয় দলের কোনো ব্যস্ততা নেই, তবুও খেলোয়াড়কে এনওসি দেওয়া হয়নি। এতে খেলোয়াড়রা হতাশ হন এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

সাম্প্রতিক উদাহরণ: সাকিব আল হাসান থেকে তরুণ ক্রিকেটাররা
আপনি যদি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এই সমস্যা কতটা ব্যাপক। সাকিব আল হাসান, যিনি বিশ্ব ক্রিকেটের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাকেও এনওসি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। আইপিএল বা অন্যান্য বিদেশি লিগে খেলার সময় তাকে অনেকবার এনওসি জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু সাকিবই নন, অনেক তরুণ ক্রিকেটারও এই সমস্যার শিকার। তাদের ক্যারিয়ারের শুরুতে যখন বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ আসে, তখন এনওসির অভাবে তারা সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন।
বিতর্কের মূল কারণগুলো কী?
এই বিতর্কের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। আসুন, সেগুলো একটু গভীরে গিয়ে আলোচনা করি:
- স্বচ্ছতার অভাব: এনওসি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব একটি বড় সমস্যা। খেলোয়াড়রা বুঝতে পারেন না, কেন তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে বা কেন দেরি হচ্ছে।
- ক্ষমতার অপব্যবহার: অনেক সময় অভিযোগ ওঠে যে, বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের উপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি করেন।
- পরিকল্পনার অভাব: ক্রীড়া বোর্ডগুলোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবও এই সমস্যার একটি কারণ। তারা আগে থেকে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা এবং বিদেশি লিগের সুযোগের মধ্যে সমন্বয় করতে পারেন না।
- আর্থিক বিষয়: কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়ও জড়িয়ে থাকে। বোর্ড হয়তো খেলোয়াড়দের বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ দিয়ে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি দেখতে চায় না, যদি খেলোয়াড় না খেলে বোর্ডের আয়ের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খেলোয়াড়দের উপর এর প্রভাব
এই এনওসি জটিলতা খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা হতাশা, অনিশ্চয়তা এবং মন খারাপের মধ্যে পড়ে যান। তাদের পারফরম্যান্সেও এর প্রভাব পড়তে পারে। একজন খেলোয়াড় যখন জানেন যে, তার ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য একটি সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মনোবল ভেঙে যায়।
সমাধান কি সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব! এই সমস্যার সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আপনি কি মনে করেন না যে, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত?
সম্ভাব্য সমাধানগুলো:
- সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন: ক্রীড়া বোর্ডগুলোর উচিত একটি সুস্পষ্ট এবং স্বচ্ছ এনওসি নীতিমালা তৈরি করা। এই নীতিমালায় আবেদনের প্রক্রিয়া, অনুমোদনের সময়সীমা এবং প্রত্যাখ্যানের কারণগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
- খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ: বোর্ড এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে নিয়মিত এবং কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা জরুরি। খেলোয়াড়দের উদ্বেগ শোনা এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
- আগাম পরিকল্পনা: বোর্ডের উচিত একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা, যেখানে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা এবং বিদেশি লিগের সুযোগগুলো সমন্বয় করা হবে।
- স্বাধীন কমিটি: এনওসি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যেখানে খেলোয়াড় প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
আপনি চাইলে বিভিন্ন ম্যাচের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের গভীরতা বুঝতে পারেন। Match Stat Analysis এবং Defensive and Offensive Statistics এর মতো টুলস ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের সামগ্রিক দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এতে এনওসি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
ফুটবলেও একই সমস্যা?
শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলেও এই NOC সমস্যা দেখা যায়। যখন বাংলাদেশের ফুটবলাররা বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পান, তখনও তাদের একই ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। ফুটবল ফেডারেশনেরও উচিত এই বিষয়ে আরও নমনীয় হওয়া এবং খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। ফুটবলে Possession and Pass Accuracy in Football এর মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সক্ষমতা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়, যা এনওসি প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়দের NOC সমস্যা একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়। এটি খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত উন্নতি এবং দেশের ক্রীড়ার সামগ্রিক অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। খেলোয়াড়দের স্বপ্নপূরণের পথ মসৃণ হোক, এবং তারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নিজেদের মেলে ধরতে পারুক— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আপনি NOC সমস্যা বিষয়ে কী ভাবছেন? আপনার মতামত আমাদের জানান। এই বিতর্কের সমাধান কিভাবে হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।